Tuesday 2 December 2014

পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই বসবাসে সামাজিক বাগান (Social garden for save environment and sustainable living)/Importance of social garden in Bangladesh


বাংলাদেশ ১৪৭৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র দেশ।এখানে প্রয়োজনের তুলোনায় অত্যন্ত কম।তদুপুরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বনভূমি কর্তনের মাত্রাও ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে।প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য কোন দেশের মোট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন।১৯৪৭ সালে আমাদের দেশে বনের পরিমান ছিল ২৪ শতাংশ। কিন্তু ১৯৮৮-১৯৮৯ সালের এক হিসাবে দেখা যায় আমাদের মোট বনভূমির পরিমান মাত্র ৭ শতাংশ। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের শেষের দিকে বনায়ন এলাকা বাড়িয়ে ১৩ শতাংশে উন্নিত করা হয়েছিল। বর্তমানে আছে মাএ ১৬:৪৬ শতাংশ বনভূমি।আমাদের দেশের খুলনার সুন্দরবন,চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি, ভাওয়াল ও মধুপুরের বনাঞ্চলের বৃক্ষ সম্পদ দিন দিন যে হারে হ্রাস পাচ্ছে সে অনুপাতে নতুন বনাঞ্চালের সৃষ্টি হচ্ছে না।এছাড়া নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন- বন্যা খরা, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বৃক্ষের অনেক ক্ষতি সাধন করছে।

বৃক্ষ না থাকলে মানুষ পৃথিবীতে বাস করতে পারত কিনা সন্দেহ। শুধু মানুষ নয়, প্রাণীজগৎ বিলুপ্ত হয়ে পড়ত।প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী বনভূমিই আজ হুমকির মুখে।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রকৃতির শোভা বর্ধণ,অন্যদিকে মানবজীবনের বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা মেটাতে আজ প্রয়োজন বৃক্ষকে টিকিয়ে রাখা,নতুন নতুন বৃক্ষরোপণ করা।সেক্ষেত্রে সামাজিক বাগানের গুরুত্ত অপরিসীম।সামাজিক বাগান বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন-ফলজ বা ভেষজ বৃক্ষের বাগান,সবজি বাগান,ফুলের বাগান ইত্যাদি। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি মুহূর্ত পত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৃক্ষের সাথে সম্পৃক্ত।বৃক্ষ সকল প্রানী কুলের খাদ্যের যোগান দেয় এবং সুবিশাল শাখা প্রশাখা বিস্তার করে ছায়া প্রদান করে উত্তপ্ত ধরণীকে সুশীতল রাখে। প্রাণী জগতকে বাঁচিয়ে বাখার জন্য বৃক্ষ অক্সিজেন সরবরহ করে এবং বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে।আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন-আসবাবপএ,জ্বালানী কাঠ,গৃহ নির্মান,রেল লাইনের স্নিপার,নৌকা,লঞ্চ,বাধ,সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করতে যে বিপুল পরিমান কাঠের প্রয়োজন  সে সকল কাঠের যোগান দেয় বৃক্ষ। বিভিন্ন শিল্প দ্রব্যের কাঁচা মাল যেমন-রেয়ন,পেন্সিল,কাগজের মন্ড,দিয়াশলাইয়ের কাঠি ও বক্স, কর্পূর,রাবার,ধুনা লাক্ষা,গদ ইত্যাদি বৃক্ষ থেকে আসে। জীবন রক্ষাকারী ভেষজ ঔষধ তৈরীর মূল্যবান উপাদান সরবরাহ এবং নিত্য-প্রয়োজনীয় মধু ও মোমের যোগান দেয় এই বৃক্ষ। মাটির ক্ষয়রোধ করে মাটিকে উর্বর রাখে।বন্যা,খরা ও ঝড় বাদল নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করেএতে আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে। পরিবেশকে গ্রীণ হাউজ প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র বৃক্ষই।

বৃক্ষ সভ্যতার সহায়ক। মানবজাতি এবং বনভূমি উভয়ের আদান প্রদানের সম্পর্কও অতি নিবিড়।এক বিপুল ভ্রান্তিবিলাসের জন্য মানুষ এখন পর্যন্ত তার পরম বন্ধুকে চরম  শ্ত্রু মনে করে নির্বোধ ঘাতকের মতো ধ্বংসের পৈশাচিক লীলাই মেতে ওঠেছে।  জাতিসংঘের এক রিপোর্টে দেখা যায, বিশ্বের সুসভ্য ও উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশ অপেক্ষা অধিক হারে বৃক্ষ কর্তন করছে। এর নানা অশুভ প্রতিক্রিয়া সারা পৃথিবীকে প্রভাবিত করছে। ফলসরূপ,বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে; দুই মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে; বৃষ্টিপাত কমে গেছে;সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের উপকূলবর্তী  ভূভাগ সাগর তলে ডুবে যাবার  সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।বৈজ্ঞানিকদের সমীক্ষায় জানা গেছে যে,গ্রীন হাউসের প্রভাবে এক মিটার সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে, আর তাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২২,৮৮৯ বর্গ কিলোমিটার পানির নিচে চলে যেতে পারে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বনায়ন বৃদ্ধি করা উচিত।তা না হলে আমরা গ্রীন হাউস এফেক্ট-এর করাল গ্রাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব না।এ অবস্থার প্রতিকার না হলে ২০৫০ সালে দিকে সারা বিশ্বে কার্বন-ডাই-অক্সাইড-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে এবং জীবনযাত্রা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। এমতবস্তায় উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাওয়ার সম্ভবনা থাকবেনা। ফলে বন ভূমি বাড়ান একান্ত প্রয়োজন ।এই দৃষ্টিকোন থেকেই হইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
            “দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
             লও যত লৌহ,লোষ্ট্র,কাষ্ঠ ও প্রস্তর
             হে নব সভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
              দাও ফিরে তপোবন,পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
              গ্লানিহীন দিনগুলি;সেই সন্ধাস্নান,”
বৃক্ষের অভাবে এদেশের উত্তরাঞ্চালের বিশেষ বিপর্যয়ের সম্মূখীন হয়েছে।এ বিপর্যয় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়িয়ে আগে প্রয়োজন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহন করাআজ আর বনভূমি ধ্বংস নয়,বনভূমি রক্ষা প্রয়োজন।মানবজীবনের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক ভারসাম্যরক্ষায় বৃক্ষরোপণই একমাত্র হাতিয়ার। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন পুরাতন গাছকে নির্বিচারে না কাটা এবং নতুন গাছের চারা লাগানো।নতুন করে গাছ লাগাতে রোপন করতে  প্রয়োজন চারার।সকল ধরনের গাছের চারা সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ।কারণ, গাছের চারা কোনটা হয় ফল থেকে,কোনটা বীজ থেকে, আবার কোনটা হয় ডাল থেকে কলমের মাধ্যমে।এরুপ চারা সাধারণ মানুষের পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন কাজ বটে।তাই এগুলো সরকারী ভাবে চারা সংগ্রহ করে সাধারন জনগনের মধ্যে বিতরন করতে হবে।তাছাড়া গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জনসাধারনের সচেতন  ও উৎসাহিত করতে হবে।বনাঞ্চল কমে যাওয়ার পরিস্থতি  পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষ রোপন করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। চারা রোপনের নিয়ম-কানুন ও পরির্চযা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করতে হবে। সাম্প্রতিককালে সরকারি-বেসরকারি উদ্যগে বৃক্ষমেলা আয়োজনের মাধ্যমে গাছের চারা সহজেই সংগ্রহ করা যাচ্ছে। প্রত্যেকের বাড়ির পাশের অনাবাদি জায়গায়,পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে বিভিন্ন পতিত জায়গায় বৃক্ষরোপন করতে হবে।এছাড়া শহরঞ্চালে বাসার ছাদে টবে কলম চারার ফলজ ও ভেষজ বৃক্ষ লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও সবজি বাগান করা যেতে পারে।কর্মব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে কিছু সময় ব্যয় করে সবজি চাষ করলে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় সবজি পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে মাটি নরম করে নিয়মিত পানি সেচ দিয়ে ও আগাছা পরিস্কার রেখে ডাঁটা, গাজর,মূলা,শালগম,টমেটো,ঢেড়স,কপি,লাল শাক,পালং শাক ইত্যাদি চাষ করা যায়। সীম,লাউ,কুমড়া,ঝিংগা,বরবটি এসব চাষ করে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। এক জায়গায় বীজ বপন করে বাশের মাচা বা এ জাতিয় কিছু একটা তৈরী করে দিলে এসব গাছ লতিয়ে উঠে এবং প্রচুর ফলন হয়।পূর্বে গ্রামঞ্চালের বাড়ির বৌ-ঝিরা এসব সবজি ফলাত এবং তাতেই সবজির চাহিদা মেটাত।আমাদের খাদ্যের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রধান উৎস এই সবজি।শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমরা সবজি থেকেই পাই।  এছাড়াও পরিবেশ রক্ষা ও সৌন্দর্য বর্ধনে বাসার ছাদে আমরা বিভিন্ন রকমের ফুলের চাষ করতে পারি। ফুল গাছের পরির্চযাও অনেক সহজ।নিয়মিত সেচ,আগাছা পরিস্কার এবং অপ্রয়োজনীয় শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলে ফুল গাছের পরির্চযা করতে হয়।

No comments:

Post a Comment