Tuesday 2 December 2014

পরিবেশ রক্ষায় ও টেকসই যোগাযোগে বাই-সাইকেল (Bicycle is friendly for save environment and sustainable living)/ Importance of Bicycle in Bangladesh



বর্তমানে মোটর গাড়ি হল প্রধান উৎস পরিবেশ দূষণের বা পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার। বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলোতে বিভিন্ন কাজে প্রচুর পরিমান মোটর গাড়ি ব্যবহার করা হয় যা পরিবেশের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। বেশির ভাগ লোক অল্প দুরত্ব যেতেও মোটর গাড়ি ব্যবহার করে এবং গাড়িতে গতি অনেক বেশি থাকে এর ফলে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। বাইসাইকেল এ সকল সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে। বাইসাইকেল একটি সঠিক ও সক্রিয় বাহন। বাইসাইকেল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঐতিহ্য বহন করে চলছে,যেমন-উনিশ শতকের শেষের দিকে নারী আন্দোলনের ও বিশ শতকের প্রথম দিকে সমাজতন্ত্রের প্রতিক হিসাবে। ১৯৫০ সালের দিকে অরাজ্বকতার ও বর্তমান সময়ে পরিবেশ রক্ষায় গুরুও্ব বহন করছে।পরিবেশ রক্ষার কার্যক্রম সবুজ জীবন ব্যাবস্থা নিশ্চত এবং সবাইকে সাংগঠনিক করতে বাইসাইকেল সাহায্য করে। বাইসাইকেল হল পরিবেশবাদী সংগঠনের অন্যতম স্তম্ভ। বায়ান মনে করে বাইসাইকেল হল পৃথিবীর ৭ম টেকসই বিস্ময়কর বস্তু। Green party of England এর মতে টেকসই জনপদে হাঁটা এবং সাইকেলে চড়াকেই বেশী প্রাধান্য দিয়েছে যোগাযোগ পরিকল্পনায়। তাদেরকে সম্ভব হলে ছোট ভ্রমনে হাঁটা এবং সাইকেলে চড়তে বলা হয়েছে। সাইকেল ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন-কোন মিটিং এ যোগদান, বিল পরিশোধ করতে,শপিং করতে,ব্যাংকে যেতে,বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যেতে ইত্যাদি।

যে সকল কারনে বাইসাইকেল ব্যবহার শুরু করা প্রয়োজনঃ

·        * সল্প অর্থে একটা বাইসাইকেল ক্রয় করা যায় কিন্তু একটা মোটর গাড়ি ক্রয় করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়।

·         *সকল প্রকার গাড়ি উৎপাদনে প্রচুর অনবায়ন যোগ্য শক্তির খরচ হয় যা পরিবেশের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। কিন্তু বাইসাইকেল তৈরীতে কিঞ্চিৎ পরিমান শক্তির খরচ হয়।

·         *বাইসাইকেল থেকে কোন প্রকার ধোয়া নির্গত হয় না তাই পরিবেশের কোন ক্ষতি সাধন করে না। এটা মোটর গাড়ীর মত তেল,গ্যাস তরল পদার্থ রাস্তার উপর পরে না যার কারনে এটার বিষক্রিয়া স্থানীয় পানিপথে মিশার সম্ভবনা নেই।

·         *যোগাযোগের বাহন হিসাবে সাইকেল ব্যবহারে শরীরের মেদ,ভূরি ও ওজন কমে। সর্বপরি শরীর সুস্থ থাকে।

  *সাইকেল ব্যবহারে নভঃক্রিড়া ব্যায়্যম হয় এতে প্রতি ঘন্টায় ৬০০ক্যালোরী শক্তি খরচ হয় এবং বছর শেষে ১৫-২০ পাউন্ড পর্যন্ত মেদ,ভূরি বা ওজন কমে কোন প্রকার খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন ছাড়ায়।

·         *বাইসাইকেল কোন প্রকার গ্যাস বা জ্বালানী তেলের খরচ হয় না।

·         *বাইসাইকেল কে দ্বিতীয় কার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। হয়তো আপনি বাইসাইকেল কে প্রাথমিক যোগাযোগের বাহন হিসাবে নেওয়ার অবস্থানে নেই। কিন্তু বাইসাইকেল বাহন হিসাবে বৃহওর যায়গা দখল করতে পারে। 

  *বাইসাইকেল ব্যবহারে আপনার সপ্তাহে এক হাজার ডলার পর্যন্ত সঞ্চয় হবে যা আপনি গ্রহস্থালি কাজে বা অন্য কাজে বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু গাড়ি ব্যবহারে আপনাকে অবশ্যই এই অর্থ খরচ করতে হবে
·        
            *বাইসাইকেল ব্যবহারে রাস্তার ক্ষতি সাধন কম হয়।সুতারাং সরকারের ঘন ঘন রাস্তা মেরামতের প্রয়োজন পরে না।

·         *একটা মোটর গাড়ির সমপরিমান জায়গায় এক ডজন বাইসাইকেল পার্কিং করা যায়। মোটর গাড়ি পার্কিং এ বিশেষ করে শহর অঞ্চলে প্রচুর পরিমান অর্থনৈতিক পরিবেশগত ক্ষতি সাধিত হয়। কিন্তু বাইসাইকেল পার্কিং এ সল্প জায়গা থাকলেই পার্কিং করা যায়।

·         *শহর অঞ্চলে বাইসাইকেল বেশি দ্রুতগামী মোটর গাড়ীর তুলনায়।সিটি ডিজাইনার যদি আলাদা সাইকেল লাইন তৈরী করে তাহলে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে। কিন্তু মোটরগাড়ীকে অব্যশই ট্রাফিক আইন মেনেই রাস্তায় চলতে হবে।

·         *মোটরগাড়ীর বিষক্ত পদ্বার্থে গাড়ীর চালক অসুস্থ হতে পারে। কিন্তু বাসাইকেল চালক শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকে। 


বাইসাইকেল ব্যবহারের সুবিধা সমূহঃ 

·          * বাইসাইকেল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বনমনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন গ্যাস, ভোলাটাইল অরাগানিক কম্পাউন্ড এর মত বিষক্ত পদ্বার্থ নির্গত হয় না।

·          *  অনেক পথ ভ্রমন করা যায়।

·         *জ্বালানী তেল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না।

·          *সাইকেল চালনা স্ব্যাস্থের পক্ষে ভাল। এটা মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করে। ৪০% বেশি কম বয়স্ক মনে হয়।

·           *উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

·            *বেশী বিশ্রামে থাকা হার্টে মৃত্যু ঝুঁকি বেশী থাকে কিন্তু সাইকেল ব্যবহারকারীর হৃদক্রিয়া বন্ধের ঝুঁকি কম থাকে।

·            * প্রতিনিয়ত বাইসাইকেলে চড়লে ডায়েবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

·            * প্রতিনিয়ত বাইসাইকেলে চড়লে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

·         *শ্বাসপ্রশ্বাস চলাচলে সহায়তা করে

·          * মাংসপেশী বৃদ্ধি ও শক্তিশালী হয়।

·           * অবসান, উদ্বেগ,ক্লান্তিহীন্তা দূর হয়।

·         *বায়ু দূষণ হয় না।
 
·         *শব্দ দূষণ কম হয়।

·         *পথমৃত্যু কমায় এবং পশুপাখির জীবন রক্ষা করে।

·         *নতুন রাস্তার চাহিদা কমায়।
 
·         *সহজ পার্কিং

·         *সল্প অর্থে পার্কিং করা যায়।

·         *পানি দূষণ কমায়।

·         *বাইসাইকেল দ্রুতগামি- হাঁটা ও অন্যান্য মোটরগাড়ি থেকে।

·         *যে মোটরগাড়ি চালাতে পারে না সে সহজেই সাইকেল চালাতে পারবে।

·         *নিজেস্ব আত্ব-সম্মান বোধ বৃদ্ধি পায়।

·         *মনের অশান্তি দূর হয়।

·         *অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করে।

·         *নিয়মিত সাইকেলিং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যায়্যম হয়।

·         *ব্যায়্যমে কর্মক্ষমতা  বৃদ্ধি পায়।

·         *এটা সহজেই বাস,ট্রেন,নৌকায় বহন করা যায়।

·         *স্বাভাবিকভাবে বাইসাইকেল প্রতি ঘণ্টায় ৫ মাইল পথ পারি দেওয়া যায়।

বাইসাইকেল বেশ Fashionable যুব সমাজের কাছে। বাইসাইকেল বিকল্প সমাজ অর্থাৎ টেকসই বসবাস ব্যবস্থা গঠনে সক্ষম। বাইসাইকেল সুস্থ সাংস্কৃতি ও রাষ্ট গঠনে অবদান রাখতে পারে। মোটরগাড়ি ব্যবহারের আমরা পরিবেশকে নরকের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বাইসাইকেল জনদূরভোগ এড়াতে, সল্প দূষণে, অতিশয় স্থুলতা দূরীকরনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
আমেরিকার সাইকেলিস্টদের এক কর্মসূচিতে সরকারী যোগাযোগ পদ্ধতির তারা প্রধানত্ব বিরোধীতা করে এবং বাধা দেয় প্রভাবশালী মোটর গাড়ীর সংস্কৃতিকে এবং তারা জোরাল কন্ঠে প্রতিবাদ জানায়। সরকারের কাছে প্রশ্ন করা হয় কোন সমাজ বেশী পছন্দ। অবশ্য তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সবার সাথে সামঞ্জস্যবিধান করা। সেখানে বাইসাইকেল রাইড সহ বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশের সমস্যা সর্ম্পকে আলচোনা করা হয়।

বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি বাইসাইকেল রাইডিং গ্রুপ রয়েছে। এগুলোর মধে অন্যতম হচ্ছে “বিডিসাইকেলিস্ট”। বিডি সাইকেলিস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা মোজাম্মেল হক এবং তার বন্ধুরা। বিডি সাইকেলিস্টের প্রধান উদ্দেশ্য সকলকে সাইকেল চালনায় উৎসাহিত করা। এরা বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। যেমন –সাপ্তাহিক ইভেন্ট,বিভিন্ন ফেস্টিবাল ইভেন্ট পহেলা বৈশাখ,বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,ঈদ, পূজা ইত্যাদি সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
শতকোটি সামর্থবান লোক যরা বাইসাইকেল ক্রয় করতে সক্ষম কিন্তু মোটরগাড়ি ক্রয় করতে সক্ষম না তারা সুন্দর সবুজ পরিবেশ গড়তে কোন সন্দেহ ছাড়াই সাইকেলে চড়বে। তাই আমাদের স্লোগান হোক “দুই চাকার অভ্যাশ করি চার চাকা ত্যাগ করি”।

No comments:

Post a Comment